রাজশাহী শহরের বহরমপুর রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর কড়াইতলা এলাকায় দিঘির পাড়ে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতালটি। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। ভবন নির্মাণকাজের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদার নিজের লোক দিয়ে প্রায় চার বছর ধরে হাসপাতাল ভবনটি পাহারা দিচ্ছেন। তারপরও চুরি হয়ে যাচ্ছে শিশু হাসপাতালটির সরঞ্জাম। ঠিকাদার বারবার চিঠি দিলেও সিভিল সার্জনের কার্যালয় নবনির্মিত শিশু হাসপাতালটি বুঝে নিচ্ছে না।
অন্যদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে শত শত শিশু। শুধু শয্যার অভাবে রামেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ফ্লোরে এমনকি সংশ্লিষ্টদের চলাচলের করিডরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে অনেকের আদরের সন্তান। চলমান শৈত্যপ্রবাহ ও ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে রামেক হাসপাতালের করিডরে শয্যা পেতে চিকিৎসাধীন শিশু ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ বর্ণনার অযোগ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আট বছর আগে ২০১৬ সালে রাজশাহী শিশু হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মূল ভবন নির্মাণকাজ তিন বছরে শেষ হয়। এরপর ঠিকাদারকে আরো কিছু বাড়তি কাজ দেওয়া হয়। সেই কাজও ২০২৩ সালের জুনের আগেই শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ দেড় বছর আগে নতুন ভবনসহ অন্যান্য সব কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। তবে ২০০ শয্যার এই শিশু হাসপাতালটি এখনো বুঝে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর চিঠি দিয়ে ভবনটি হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ করা হয়।
ঠিকাদারের ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সরকার জানান, রাজশাহী শিশু হাসপাতাল ভবনটি তারা পাহারা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এভাবে আর পাহারা দিয়ে সরঞ্জাম টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের পাহারাদার কিছু বলতে গেলেই চোরেরা কাচ ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে। জানালার অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম খুলে নিয়ে যাচ্ছে। তারা হাসপাতাল ভবনটি বুঝে নিতে কত বার চিঠি দিয়েছেন; তা মনে করতে পারছেন না। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবন হস্তান্তরের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন না।
রাজশাহী শিশু হাসপাতাল ভবন বুঝে না নেওয়ার বিষয়ে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, ‘সমস্যা গণপূর্তের নয়। সমস্যা সিভিল সার্জন তথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতাল বুঝে নেওয়া হচ্ছে না, এটাই সমস্যা। আমরা ভবন নির্মাণকাজ শেষ করেছি। ভবনটা সিভিল সার্জনের বুঝে নেওয়ার কথা। তিনি কেন বুঝে নিচ্ছেন না? আমরা জানি না।’
সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘আমরা কয়েক বার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সাড়া মিলেনি। তিনিও বদলি হয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি আর কিছু বলতে পারছি না।’
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গেলে খুব করুণ দৃশ্য দেখা যায়। কী মানবেতরভাবে আমাদের শিশুদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। শিশু হাসপাতালের জন্য জনগণের অর্থ ব্যয় তখনই সার্থক, যখন তা জনগণের উপকারে আসে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাজশাহী শিশু হাসপাতাল ভবন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে হাসপাতালটি অবিলম্বে চালু করা উচিত
মো: গোলাম কিবরিয়া
রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি