অদম্য মেধাবী ফারজানা ও তার ভবিষ্যৎ

ঘর আছে, কিন্তু জমিটা নিজেদের নয়। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান জান্নাতুল ফারজানার বাবা। নুন আনতে পান্তা ফুরায় সংসারে। জান্নাতুল ফারজানা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন, কিন্তু ভর্তির টাকা নেই। মেধাবী মেয়েটির জন্য এগিয়ে এলেন প্রতিবেশী ও এলাকার মানুষ। তাতে ফারজানার মেডিকেল কলেজে ভর্তির বন্দোবস্ত হলো। কিন্তু বাকিটা পথ শেষ হবে কীভাবে, সেই চিন্তার শেষ নেই ফারজানার। অনিশ্চয়তায় প্রতিটি দিন কাটছে তাঁর।

ফারজানার বাড়ি রাজশাহী নগরের রাজপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম জাহিদ হাসান মুকুল। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরীক্ষা দিয়ে ফারজানা রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। ২০২২ সালে এই বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন সব বিষয়ে জিপিএ-৫ নিয়ে। তারপর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হন রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে। গত বছর এই কলেজ থেকেই উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে। এ বছর তিনি হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ভর্তি হয়েছেন ৪ ফেব্রুয়ারি।

ফারজানার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, টিনশেড বাড়িতে ছোট ছোট দুটি ঘর। একটা ঘরে থাকেন তাঁর মা-বাবা। অন্য ঘরে দাদি আর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন ফারজানা। তখন বাড়িতে ছিলেন না বাবা জাহিদ হাসান মুকুল। কিছুক্ষণ পর ভ্যান নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।

ফারজানা বলেন, ‘ভর্তি হতে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা লেগেছে। এই টাকাটাই আমাদের ছিল না। আমি মেডিকেলে চান্স পেয়েছি দেখে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসেছেন। যে যার মতো করে সহযোগিতা করেছেন। এখন শুনছি মেডিকেল কলেজের বইয়ের অনেক দাম। তা ছাড়া বাড়ি থেকে অনেক দূরে থাকা ও খাওয়ার খরচও আছে। সব মিলিয়ে আমি খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ, আমার ভ্যানচালক বাবার পক্ষে এত খরচ বহন করা কোনোমতেই সম্ভব না।’

ফারজানা আরও বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হব। ডাক্তার হয়ে অসহায় মানুষের সেবা করব। মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হতে পারব কি না জানি না। আমাকে সবাই যদি সহযোগিতা করেন, তাহলে হয়তো সেটা সম্ভব হবে। তা না হলে এখানেই থেমে যেতে হবে। কারণ, এত দারিদ্র্যের মধ্যে তো সব সম্ভব না।’

ফারজানার বাবা জাহিদ হাসান মুকুল বললেন, ‘ভ্যান চালিয়ে অনেক কষ্ট করেই সংসার চালাই। তারপরও যেভাবেই পারি আমি মেয়ের পড়াশোনাটা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে মেয়ে আমার মুখ উজ্জ্বল করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি তাঁকে পড়াশোনা করাতে পারব কি না জানি না। সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে আমার মেয়েটার স্বপ্নপূরণ হবে। ডাক্তার হয়ে আমার মেয়ে মানুষের সেবা করবে।’

মো: গোলাম কিবরিয়া

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি

  • সম্পর্কিত পোস্ট

    নারায়ণগঞ্জ পূর্ব সাংগঠনিক থানার উদ্যোগে “ভাষাদিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া ” অনুষ্ঠিত হয়

    আজ ২৫/০২/২০২৫ তারিখ জুমা’বার নারায়ণগঞ্জ পূর্ব সাংগঠনিক থানার উদ্যোগে “ভাষাদিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া ” অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর অন্যতম সূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য…

    আরও পড়ুন

    বিদ্যুৎ ব্যবহারের চেয়েও বিল বেশী কেন????

    ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে চরম ভোগান্তিতে রাজশাহী বিভাগের গ্রাহকরা। তাদের অভিযোগ, প্রতি মাসে ব্যবহারের চেয়ে বেশি আসছে বিল। এ নিয়ে বারবার অভিযোগ করেও মিলছে না প্রতিকার। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন…

    আরও পড়ুন

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    আপনি মিস করেছেন

    তানোরে গলায় ফাঁস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

    • By Admin
    • February 21, 2025
    • 0
    তানোরে গলায় ফাঁস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

    নারায়ণগঞ্জ পূর্ব সাংগঠনিক থানার উদ্যোগে “ভাষাদিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া ” অনুষ্ঠিত হয়

    • By Admin
    • February 21, 2025
    • 0
    নারায়ণগঞ্জ পূর্ব সাংগঠনিক থানার উদ্যোগে “ভাষাদিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া ” অনুষ্ঠিত হয়
    বিদ্যুৎ ব্যবহারের চেয়েও বিল বেশী কেন????

    অদম্য মেধাবী ফারজানা ও তার ভবিষ্যৎ

    • By Admin
    • February 19, 2025
    • 0
    অদম্য মেধাবী ফারজানা ও তার ভবিষ্যৎ

    সড়ক দুর্ঘটনায় চলে গেলেন নারী সাংবাদিক

    • By Admin
    • February 19, 2025
    • 0
    সড়ক দুর্ঘটনায় চলে গেলেন নারী সাংবাদিক

    রাজশাহীতে চলছে পুষ্প মেলা

    • By Admin
    • February 19, 2025
    • 0
    রাজশাহীতে চলছে পুষ্প মেলা